বাংলাদেশে মাত্র ৯ ডলারে স্টারলিংক ইন্টারনেট সংযোগ। স্টারলিংক সংযোগ নিবেন কি কভাবে?

স্টারলিংক সংযোগ নেওয়ার নিয়ম কানুন?

বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৯ ডলার বা প্রায় ১০০০ টাকা ডিপোজিটে পাওয়া যাচ্ছে স্টারলিংক এর ইন্টারনেট সংযোগ।



স্টার্লিং কি?

স্টারলিংক হচ্ছে (LEO) বা লো আর্থ অরবিটে থাকা কয়েক হাজার ছোট ছোট কৃত্তিম উপগ্রহের সংযোগে তৈরি ইন্টারনেট ব্যবস্থা। যা ট্রান্সসিভারের সাথে একত্রে কাজ করবে। এবং পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে লোল্যাটেন্সি ইন্টারনেট প্রোভাইড করবে ।

ফলে গ্রাহকরা স্টারলিংক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসে যে কোন সময় নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সুবিধা পাবেন।

স্টারলিংক ইলন মাস্কের স্পেস এক্স কম্পানির একটি শাখা ।  ২০১৫ সালে স্টারলিংক আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে । এবং ২০১৮ সালে দুটি স্যাটেলাইট পরীক্ষামূলকভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের মে মাসে পরীক্ষামূলকভাবে আরো আরো কিছু স্যাটেলাইট সহ ব্যবহারযোগ্য ৬০টি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হয়।

২০২১-২২ সালে ১৪৪০ টি উপগ্রহ স্থাপনের লক্ষে ২৬০ কিলোগ্রাম বা ৫৭০ পাউন্ডের    আরো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়। 


স্পেস এক্স ২০২০ সালের অগাস্টে রাষ্ট্রের উত্তর অঞ্চলে এবং সেপ্টেম্বরে জনসাধারণের জন্য বিটা পরিষেবা চালু করেন। ৮০ ডিগ্রী এবং ৫২ ডিগ্রি উত্তর অঞ্চলে সেবা প্রদান করেছে।


চলুন বাংলাদেশে স্টারলিংক এর যাত্রা এবং অর্ডার করার নিয়ম জেনে নেওয়া যাক।


সম্প্রতি বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের সঙ্গে স্টারলিংক এর প্রতিনিধিদের বাংলাদেশের এক বৈঠকে বাংলাদেশে স্টারলিংক চালু করার ব্যাপারে আলোচনা করা হয় এবং পরবর্তীতে এ ব্যাপারে (২৬ জুলাই) পাইলট প্রজেক্ট এর সম্মতি প্রদান করে বাংলাদেশ। এবং পরবর্তীতে ২৯ জুলাই এর দাম নির্ধারণ করা হবে বলে জানান ওই প্রতিমন্ত্রী ।


আগে এলে আগে পাবেন বা first-come, first-served basis. 


এমনই স্লোগানে নভোচর কম্পানি স্পেস এক্স তাদের স্টারলিংক ইন্টারনেট এর জন্য প্রি অর্ডার গ্রহণ করছেন। 

বাংলাদেশ থেকেও নেওয়া হচ্ছে স্টারলিংক ইন্টারনেটের প্রি- অর্ডার। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী সর্বশেষ আমরা স্পেস এক্সের স্টারলিংক ইন্টারনেট প্রোভাইড করা ওয়েবসাইট Order Starlink -এ সর্বনিম্ন 9 ডলার ডিপোজিট এর মাধ্যমে প্রি- অর্ডার দেখতে পেয়েছি।


এবং তারা এও বলেছে যদি স্টারলিংক এর সুবিধা বাংলাদেশে অনুমোদিত না হয় তাহলে গ্রাহকের পুরো অর্থ রিফান্ড করে দেওয়া হবে। 


চলুন স্টেপ বাই স্টেপ দেখা যাক স্টারলিংংক প্রি-অর্ডার করার পদ্ধতি 


স্টারলিংকের ইন্টারনেট সুবিধা প্রি অর্ডার করতে হলে আপনাকে প্রথমে আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারের যেকোনো একটি ব্রাউজার ওপেন করতে হবে । 

তারপর আপনাকে ব্রাউজার এর সার্চ অপশন এ গিয়ে লিখতে হবে Order starlink এবং সার্চ করতে হবে।


সার্চ রেজাল্টের প্রথম যে ওয়েবসাইটটি দেখানো হবে সেটির শিরোনাম হল অর্ডার স্টার লিংক (Order Starlink) এবং ডোমেইন নাম হলো স্টারলিংক ডটকম (starlink.com)।

এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে আপনি দেখতে পাবেন ওয়েবসাইটের ঠিক মাঝেই একটি সার্চ অপশন রয়েছে । এখানে আপনি আপনার সার্ভিস এড্রেস বা বর্তমানে যে ঠিকানায় রয়েছেন বা যে দেশে রয়েছেন সেই দেশের নামটি লিখবেন এবং সেই দেশটি সিলেক্ট করবেন। যেহেতু আপনি বাংলা কনটেন্ট পড়ছেন তার মানে আপনি বাংলাদেশ থেকেই অর্ডার করতে চাচ্ছেন তো আপনি ওখানে সিমপ্লি লিখবেন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ সিলেট করে অর্ডার নাউ (Order Now) তে ক্লিক করবেন।





পরে আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে পরবর্তী পেজে। এই পেজে থাকবে গ্রাহকের ডিপোজিট অ্যামাউন্ট এবং নিচে লেখা থাকবে (টোটালি রিফান্ডাবেল) এবং একটি ফর্ম থাকবে যে ফর্মটি পূরণ করে নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলার ডিপোজিট করার মাধ্যমে বা কাঙ্খিত মূল্য পরিশোধ করে সাবমিট করলেই আপনার অর্ডারটি সম্পূর্ণ হবে ।





কবে নাগাদ বাংলাদেশ থেকে গ্রাহক সংযোগ পাবেন 


স্টারলিং এর ওয়েবসাইটের সর্বশেষ ভাষামতে বাংলাদেশ থেকে সকল ধরনের গ্রাহকরা বা সর্বসাধারণ ২০২৪ সাল নাগাদ স্টারলিং এর সংযোগ সুবিধা এবং সার্ভিস পাবেন ।

তবে তারা হাইলাইটস করে যে কথাটি বলছেন সেটি হল যে আগে পি অর্ডার করবেন সেই আগে সংযোগ এবং ইকুপমেন্ট গুলো পেয়ে যাবেন।


ডিপোজিটের পরবর্তীতে সবমিলিয়ে মোট কত টাকা খরচ হতে পারে 


যেহেতু এই 9$ ডলার দিয়ে আপনি ডিপোজিট করেছেন যে আপনি এই সার্ভিসটি নিবেন। তার জন্য একটি অর্থ প্রদান করে বুকিং করে রেখেছেন। পরবর্তীতে যখন সার্ভিসটি বাংলাদেশের জন্য এভেলেবল করা হবে বা সর্বসাধারণের জন্য এভেলেবেল করা হবে, তখন আপনাকে মেইলের মাধ্যমে বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে কত টাকা পরিশোধ করে আপনি পুরোপুরি সার্ভিসটি নিতে পারবেন ।


এখন পর্যন্ত জানা তথ্য মতে, সর্বমোট গ্রাহককে প্রায় 500 থেকে 599 ডলার বা ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা  এককালীন ব্যয় করতে হবে। শুধুমাত্র চারলিংক ডিস এন্টেনা, অন্যান্য ইকুপমেন্ট এবং তাদের রাউটার ক্রয় করার জন্য ।


পরবর্তীতে প্রত্যেক মাসে 99$ থেকে 110$ ডলার ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা সাবস্ক্রিপশন ফী প্রদান করতে হবে ।


এছাড়াও স্টারলিংকের কিছু সাবস্ক্রিপশন প্যাকেজ রয়েছেেএই প্যাকেজের মাধ্যমে গ্রাহক চাইলে ইন্টারনেটের গতি বাড়িয়ে বা কমিয়ে নিতে পারেন এবং তাদের সাধ্যমত প্যাকেজ ক্রয় করতে পারেন তবে এই প্যাকেজগুলো কিন্তু বেশ ব্যয়বহুল। 

প্যাকেজগুলো সম্পর্কে নিচের ছবিতে বিস্তারিত দেওয়া হলো।


লিংকের ইন্টারনেট স্পিড বা গতি কেমন হবে 


স্টারলিংক  ইন্টারনেটের একটি বড় প্রশ্ন হল এর গতি নিয়ে। সবার মধ্যেই নানান প্রশ্ন এবং কৌতূহল যে স্যাটেলাইট দ্বারা পাওয়া ইন্টারনেটের গতি কতটা হবে, কতটা গতি রিয়েল লাইফ বা বাস্তব জীবনে আমরা পেতে পারি। 

লিংক এর ভাষ্যমতে অঞ্চল এবং আবহাওয়া ভেদে 35 থেকে প্রায় 200 এম বি পি এস পর্যন্ত স্পিড পেতে পারে স্টারলিংক গ্রাহকরা। 

এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী স্টারলিং এর ইউজাররা যে স্প্রীড টেস্ট দেখিয়েছেন তাতে কিন্তু স্পেস এক্স বা নভোচারীর সংস্থা Space x এর StarLink  ইন্টারনেট সেবা তাদের কমিটমেন্ট ধরে রাখতে পেরেছে ।


তবে বাংলাদেশ থেকে কতটা স্পিড পাওয়া গিয়েছে তার কোন সঠিক তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি ।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলি থেকেও এই স্টারলিংকের ডাউনলোড স্পিড 35 থেকে 150 এমবিপিএস পর্যন্ত পাওয়া যেতে পারে এবং আপলোড স্পিড ১০ থেকে ১১ এমবিপিএস পর্যন্ত পাওয়া যেতে পারে। 


যেহেতু স্টারলিংক ইন্টারনেট একদমই নতুন তাই ভবিষ্যতে এটির যে সংস্করণ এবং আপডেট আসবে সেখানে বলা যেতে পারে স্টারলিংক ইন্টারনেট স্পিড আরো অনেক বাড়বে এবং এর সুবিধা গুলো অনেক বেশি থাকবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। 


স্টারলিংক থেকে সর্বোচ্চ ইন্টারনেট স্পিড পেতে করনীয় কাজ 


প্রথমে গ্রাহকদের বেশ কিছু বিষয় বা কনসেপ্ট ক্লিয়ার থাকতে হবে । এগুলো হলো ডার্লিং একটি স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট প্রোভাইড কারী প্রতিষ্ঠান।  এখান থেকে আমরা স্যাটেলাইট কানেকশন এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করব সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের বাইরের পরিবেশের উপরে বেশ কিছু ব্যাপার নির্ভর করবে।

ইস্টারলিংক  গ্রাহকদের ইন্টারনেট স্পিড বেশি পাওয়ার জন্য যে নির্দেশনা গুলো দিয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, স্টারলিংক থেকে যে এন্টিনাটা বা ট্রান্সসিভার দেওয়া হবে সেটি অবশ্যই ফাঁকা জায়গায় স্থাপন করতে হবে। ভালো হয় যদি বাড়ির ছাদে বা খোলা উঁচু স্থানে স্থাপন করা যায়।  অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন এন্টেনা বা স্টারলিংক এর যে ট্রান্সসিভার রয়েছে সেটির উপরে কোন রকম গাছ বা অন্য কোন বাধা না থাকে। 

যেহেতু ট্রান্সসিভার অটোমেটেড ভাবে স্যাটেলাইট এর দিকে মুভ করতে পারে বা যেদিকে স্যাটেলাইট রয়েছে সে দিকে মুখ করে থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনি জাস্ট ট্রান্সসিভার পজিশন মত বা নির্দেশনা অনুযায়ী যে দিকে স্থাপন করতে বলা হয়েছে সেদিকে স্থাপন করলেই বাকিটা ট্রান্সসিভার একা একা বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে দিক ঠিক করে নিতে পারবে।  এতে করে আপনি সম্পূর্ণ এবং সর্বোচ্চ সুবিধার নিতে পারবেন।


পরিশেষ

আপনি যদি ইস্টারলিংক এর স্যাটেলাইট সংযোগ নিয়ে থাকেন বা ব্যবহার করে থাকেন বা এ সম্পর্কে আরো কোন তথ্য জেনে থাকেন অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটের মন্তব্য বক্স বা Comment বক্সে আপনার মন্তব্যটি লিখবেন ধন্যবাদ। 







সাংবাদিক, প্রযুক্তিবিদ, লেখক ও সমাজ কর্মী।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url