কিভাবে ফেইসবুক হ্যাক হয়? ফেইসবুক হ্যাক হলে রক্ষা পাওয়ার উপায়।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটা ক্ষেত্রে ফেসবুকের উপর নির্ভশীলতা বাড়ছে। বর্তমান সময়ে ফেসবুকে একটি একাউন্ট নেই এমন মানুষ খুজে পাওয়া যাবে না। খুব সহজে ফেসবুকের মাধ্যমে সবার কাছে পৌছানো যায়।


তাই শুধু ব্যাক্তি নয় এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও তাদের ব্যবসার প্রসারের লক্ষে প্রতিষ্ঠানের নামে পেজ খুলে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। সেলিব্রেটিরাও তাদের সরব উপস্থিতির মাধ্যমে নিজেদের ব্যাক্তিগত আপডেট দিচ্ছেন ফেসবুকে। কেউ কেউ ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করে লাখ টাকা ইনকামও করছেন ফেসবুক থেকে। বলা যায় সামাজিক যোগাযোগের এ মাধ্যমটি আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। অপর দিকে বসে নেই হ্যাকাররাও।
আপনার অসাবধানতায় খুব সহজেই হ্যাকার আপনার ফেসবুকের নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিতে পারে। ফেসবুক হ্যাক করে হ্যাকাররা তাদের ইচ্ছা মত পোস্ট এর মাধ্যমে আপনাকে ফেলে দিতে পারে চরম অস্বস্তিতে। তাই আগে থেকেই যদি সতর্ক থাকা যায় তাহলে ফেসবুক হ্যাক হওয়ার মত অস্বস্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।

যেভাবে আপনার ফেসবুক নিরাপদ রাখতে পারবেন 


১. লগইন এলার্ট: ফেসবুকের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেটিং হচ্ছে লগইন এলার্ট। ফেসবুক হ্যাক হওয়া থেখে রক্ষা পেতে লগইন এলার্ট চালু করে রাখা জরুরি। এ সেটিং চালু করলে আপনার ফেসবুক কোথাও লগইন হলে সাথে সাথে লগইন এলার্ট চলে আসবে। যে ইমেইল অথবা ফোন নাম্বার থেকে ফেসবুক ক্রিয়েট করা হয়েছিল সেটা একটিভ থাকলে সাথে সাথে খুদে বার্তা বা মেইল এ  জানিয়ে দেওয়া হবে। কোথায় আপনার ফেসবুক লগইন করা হয়েছে বা লগইন এর চেষ্টা করা হয়েছে তা লগইন এলার্ট এর মাধমে জানা যাবে। এর ফলে কেউ আপনার একাউন্ট লগইন করার চেস্টা করলে আপনি দ্রুত জানতে পারবেন এবং ব্যাবস্থা নিতে পারবেন।


২. লগইন কোড ভেরিফিকেশন:


ফেসবুক লগইন কোড ভেরিফিকেশন চালু থাকলে, যখনই কোন নতুন ব্রাউজারে ফেসবুক একাউন্টটি লগইন করার চেষ্টা করা হবে তখন আপনার ফোন নাম্বার অথবা ইমেইলে একটি কোড আসবে। আপনি ওই কোডটি প্রবেশ না করালে ফেসবুক লগইন হবে না। কোডটি প্রবেশ করারনোর পর ভেরিফাই হয়ে একাউন্ট লগইন করতে হবে। এতে করে যদি কেউ আপনার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড জেনে যায় তাহলে সে চাইলেই আপনার একাউন্টটি লগইন করতে পারবে না। আপনার ফেসবুক যদি হ্যাক করার চেষ্টা করা হয় তাহলে খুব সহজেই আপনি বুঝতে পারবেন। এবং প্রয়োজনিয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। ফলে লগইন কোড ভেরিফিকেশন চালু থাকলে ফেসবুক আইডি সহজে হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।


৩. কঠিন পাসওয়ার্ড সেট করুন:

ফেসবুক একাউন্ট ক্রিয়েট করার সময় পাসওয়ার্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ঘরে তালা লাগালে যেমন চাবি ছাড়া খোলা অসম্ভব তেমনি ফেসবুকের পাসওয়ার্ড জানা ছাড়া আপনার আইডির এক্সেস অন্য কারো নেওয়া অসম্ভব। আপনি যদি একাউন্ট ক্রিয়েট এর সময় দূর্বল পাসওয়ার্ড সেট করেন তাহলে সেটা আপনার একাউন্ট এর জন্য ঝুকির কারণ। ফেসবুক হ্যাক হওয়ার পিছনে সহজ পাসওয়ার্ড অনেকটা দায়ি। যেমন বার্থ ডে, মোবাইল নাম্বার অথবা এক থেকে নয় দিয়ে অনেকে ফেসবুকের পাসওয়ার্ড সেট করেন। যেটা খুব সহজেই হ্যাকাররা বুঝে ফেলতে পারে।


তাই সব সময় চেষ্টা করবেন কঠিন পাসওয়ার্ড সেট করতে। এক্ষেত্রে কিছু সংখ্যা এবং অক্ষর ব্যাবহার করতে পারেন। যে পাসওয়ার্ডটি সেট করবেন সেটি যাতে কেউ অনুমান করে যাতে বুঝতে না পারে। ফেসবুকে কঠিন পাসওয়ার্ড দিলে সহজে হ্যাক হওয়া থেকে আইডি রক্ষা পেতে পারে।


৪. ফিসিং লিংক ক্লিক থেকে বিরত থাকা:

ফেসবুক মেসেঞ্জার ও ইমেইলে নানা রকম লিংক আসে। যেগুলো ক্লিক করে অনেকেই তাদের ফেসবুক একাউন্ট হারিয়েছেন। হ্যাকাররা ব্যাবহারকারিদের প্রলুব্ধ করতে বিভিন্ন মোডিফাই করা ফিসিং লিংক পাঠিয়ে থাকে। যেগুলোতে ক্লিক করলে আপনার একাউন্ট এর সকল এক্সস হ্যাকারদের হাতে চলে যেতে পারে।


ফেসবুক বা ইমেইলে অপরিচিত কেউ এধরণের লিংক প্রেরণ করলে অবশ্যই যাচাই করে দেখুন। প্রলোভন দেখানো কোন লিংক প্রেরণ করলে তা যাচাই না করে কখনোই লিংক এ  প্রবেশ করবেন না। অনেক সময় এসব লিংক ফেসবুক হ্যাক করার ফাদ হতে পারে। তাই এসব লিংকে প্রবেশ করার বেশি প্রয়োজন হলে ব্রাউজার থেকে ফেসবুক লগ আউট করে লিংক এ প্রবেশ করুণ।


৪. ফেক আইডি  থেকে শতর্ক থাকুন:

হ্যাকাররা ফেসবুক হ্যাক করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকে। ফেক আইডির মাধ্যমে বন্ধুত্ব করে বিশ্বস্ততা অর্জনের পর নানা কৌশলে আইড হ্যাক করার কথা শোনা যায়। তাই ফেক আইডি থেকে রিকোয়েস্ট আসলে ভালো ভাবে যাচাই না করে এক্সেপ্ট করবেন না। অথবা ফেক আইডি থেকে আসা লিংক অথবা প্রলোভনে আসক্ত হবেন না।


৫. বিজনেস ডিল এ সতর্কতা:

ফেসবুক একাউন্ট বা পেজ এর ফলোয়ার বৃদ্ধি পেলে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে স্পনসরশিপের অফার আসে। হ্যাকাররাও অনেক সময় ফেসবুক হ্যাক করার উদ্দেশ্যে স্পনসরদের মতো করেই বিজনেস ডিল এর অফার দিয়ে থাকে। হ্যাকাররা বিভিন্ন কোম্পানির মতো করে ওয়েবসাইট তৈরি করে বিজনেস ডিল এর লিংক প্রেরণ করে। এসব লিংক থেকে কৌশলে আইডি হ্যাক করে নেওয়ার খবর শোনা যায়। তাই ফেসবুকে যেকোনো বিজনেস ডিল করার সময় আসল ও নকল যাচাই করে নিন।

স্পনসরশিপ নেওয়ার ক্ষেত্রে কখনো নিজের ব্যাক্তিগত ইনফরমেশন শেয়ার করবেন না।  আপনার যে ইমেইল এবং ফোন নম্বর থেকে ফেসবুক খোলা সেটি বিজনেস এর ক্ষেত্রে ব্যাবহার না করা ই ভালো। আপনার ফেসবুক পাসওয়ার্ড কখনো কাউকে শেয়ার করবেন না।
এছাড়া ফেসবুক ব্যবহারে আরো সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য ফেসবুক এর সকল নির্দেশনা মেনে চলুন।

যদি ফেসবুক হ্যাক হয়ে যায় তাহলে কি করবেন


১. পাসওয়ার্ড রিসেট করুন:

যদি কখনো আপনার ফেসবুক হ্যাক হয়ে যায় তাহলে প্রথমেই ফেসবুকের পাসওয়ার্ড রিসেট করুন। যদি হ্যাকাররা প্রথমেই আপনার ফেসবুক হ্যাক করে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নেয়। তাহলে যে ইমেইল বা ফোন নাম্বার থেকে একাউন্ট খুলেছেন সেটা দিয়ে পাসওয়ার্ড রিসেট করতে হবে। এভাবে নতুন পাসওয়ার্ড সেট করে পূনরায় ফেসবুকে প্রবেশ করা যাবে। যদি হ্যাকার আপনার ইমেইল ফোন নাম্বার এবং পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নেয় তাহলে পাসওয়ার্ড রিসেট করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে ২য় নম্বর নির্দেশনা ফলো করুণ।


২. ফেসবুকে রিপোর্ট:

হ্যকাররা ফেসবুকের পাসওয়ার্ড, ইমেইল ও ফোন নাম্বার চেন্জ করে ফেললে চাইলেও পাসওয়ার্ড রিসেট/ রিকভার করা যায় না। এ অবস্থায় হতাস না হয়ে হ্যাক হওয়ার বিষয়েেআপনি ফেসবুকে সরাসরি রিপোর্ট করতে পারবেন। ফেসবুকে রিপোর্ট করার জন্য www.facebook.com/hackd   ঠিকানায় প্রবেশ করে প্রয়জনিয় তথ্য দিতে হবে। যেমন আপনার লাস্ট পাসওয়ার্ড, ইমেইল, ফোন নম্বর এবং আইডেন্টিটি ইনফরমেশন। এই রিপোর্ট করার ৪৮ ঘন্টার ভিতর হ্যাক হওয়া ফেসবুক একাউন্ট ফিরে পাওয়া যায়।


৩. সকলকে জানানো:

আমরা ফেসবুকে সকল পরিচিত জনদের সাথে এড থাকি। ফেসবুক হ্যাক হলে হ্যাকাররা কখনো কখনো বিভিন্ন পোস্ট করে থাকে যা সামাজিক ভাবে আমাদের অস্বস্তিতে ফেলে দেয় এবং পরিচিত জনদের বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত মেসেজ দিয়ে থাকে। অনেক সময় অর্থ চাওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে।  তাই ফেসবুক হ্যাক হলে প্রথমেই সকলকে জানিয়ে রাখা ভালো। প্রয়োজনে থানায় অভিযোগ জানানো যেতে পারে।


পরিশেষ:

ফেসবুক ব্যাবহার করতে হলে এর নিরাপত্বার দিকটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। প্রতিনিয়ত ফেসবুক হ্যাক হওয়ার ঘটনা শুনতে পাওয়া যায়। তাই উপরের লেখার মাধ্যমে ফেসবুক ব্যাবহারের নিরাপত্বা সম্পর্কে কিছুট ধারণা নেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছি। ফেসবুকে নিরাপদ থাকতে তাদের টার্মস এন্ড কন্ডিশন ফলো করুন।






  সাংবাদিক, লেখক ও সমাজ কর্মী

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url